ঈদ আসে-ঈদ যায়, স্মৃতিটুকু রয়ে যায়
০৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২৬ এএম | আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২৬ এএম

আনন্দ উচ্ছ্বাস আর খুশির বার্তা নিয়ে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ফিরে এল ঈদ। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম তথা রোজাব্রত পালনের পর খুশির বার্তা নিয়ে ফিরে এল পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদ মানে খুশি; আনন্দধারা। সেই ছোট কাল থেকে ঈদের আনন্দ দেখে আসছি; উপভোগ করছি। ঈদের উচ্ছ্বাস ঘুচিয়ে দেয় অন্ধকার। আলোকিত হয়ে ওঠে মানুষের হৃদয় ও মন। দুঃখ-কষ্ট বেদনার নিগড় থেকে মুক্ত শুদ্ধ অন্তরে নেমে আসে শান্তি। মানুষের মধ্যকার দুঃখ-কষ্ট আর গ্লানিবোধ ঝেড়ে ফেলে সমাজবদ্ধ মানুষ মেতে ওঠে আনন্দ উৎসবে। সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে আনন্দে মেতে ওঠাই ঈদুল ফিতরের শিক্ষা। একাকী আনন্দ উপভোগ করার মধ্যে তৃপ্তি নেই।
পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু-স্বজন, পরিবার ও আপনজন মিলে আনন্দ করার মজাই আলাদা। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের চিরায়ত গানের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে হয়: ‘ও মন রমজানেরই রোজার শেষে এল খুশির ঈদ তুই আপনারে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানি তাগিদ।’ কী চিরন্তন আহ্বান! মনের আকাশ খুলে দিয়ে মানুষকে মানুষের মধ্যে মিশে যাওয়ার শাশ্বত আহ্বান । এ খুশি মানে তো সবই সুন্দর, মধুর আলোকমালার আনন্দে ভরপুর। আগেকার দিনে ঈদ আসার এক সপ্তাহ আগে থেকেই গ্রাম-গঞ্জে, পাড়া-মহল্লায় আনন্দ উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হতো। সবাই হাটে-বাজার থেকে, কেউ কেউ শহর থেকে ঈদের বাজার করে নিয়ে আসত।
সেই শিশুকালে নতুন জুতো, জামা-পায়জামা পরে বাবার হাত ধরে প্রথম ঈদের মাঠে যাওয়া শুরু। ঈদগাহের জনারণ্যে দাঁড়িয়ে রং-বেরঙের সজ্জা ও মানুষ দেখতাম চোখ ঘুরিয়ে। ইনিয়ে-বিনিয়ে বাবার কাছে কত প্রশ্ন করতাম! নামাজ শেষে ঈদের কোলাকুলি দেখতাম অবাক হয়ে। পাড়ায়-মহল্লায় ঘরে ঘরে মানুষের আসা -যাওয়ার ধুম পড়ে যেত। মেয়েরা নতুন সাজে সজ্জিত হয়ে এ বাড়ি ও বাড়ি যেত। কোলাহলমুখর হয়ে উঠত আমাদের বাড়ির পরিবেশ। আপনজনের ভিড় আর বাবার সঙ্গে আসা গণ্যমান্য মানুষের আপ্যায়নে যোগ হতো ফিরনি, পায়েস, সেমাইসহ নানা রকম খাবার। খাবার পরিবেশনের তত্ত্বাবধানে থাকতেন মা। ভাই -বোনেরা মহা আনন্দে অতিথি আপ্যায়নে মত্ত থাকত। উৎসবমুখর ছিল শৈশব-কৈশোরের ঈদ।কী যে খুশির বন্যা বয়ে যেত সবার মাঝে! ঈদের সকালে নামাজ শেষে সবাই যখন বাড়ির দিকে যেত।
সকালের কচি রোদের মোহময়তায় বাড়ির সামনের স্কুলঘর ও মাঠে বড়দের খেলাধুলার রঙ্গালয় জমে উঠত। ঈদের জ্যোৎস্না রাতে কাছারির সামনে কিংবা স্কুলমাঠে জারিগান ও পালাগানের আসর বসত। কত যে আনন্দমুখর ছিল সেই সব দিন! তারুণ্যের উৎসব আমেজ উন্মাদনা ছড়াতো দেহ-মনে। মনে হতো কারও কোনো দুঃখ নেই। সবাই আনন্দের অবগাহনে ডুবে আছে। কবিগুরুর ভাষায়-‘এই মোর সাধ যেন এ জীবনমাঝে- তব আনন্দ মহা সংগীতে বাজে।তোমার আকাশ, উদার আলোকধারা ,দ্বার ছোট দেখে ফেরে না যেন গো তারা।’
যখন বড় হতে থাকলাম জীবনের তাগিদেই বাড়িছাড়া হতে হলো। মায়ের মমতাঝরা আঁচল আর কৈশোরের বন্ধুজন ছেড়ে প্রথমে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বাগড়া মাদ্রাসা শিক্ষা জীবন, অতঃপর চট্টগ্রাম কর্মজীবনে তারুণ্যময় এবং যৌবনের বৈচিত্র্যময় সময়টা শুরু হলো অন্যরকম ঈদ। ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে আনন্দ। মাঝেমধ্যে কারও কারও দলছুটো প্রেম নীরব অন্তরে কড়া নাড়ত। মনের সুধায় অন্য কোথাও মিশে যাওয়ার তাগিদ থাকত কখনো কখনো। উদ্দেশ্য সবার মাঝে আনন্দ ও পরম তৃপ্তির ছোঁয়া লাগানো। আর রাতে বাসায় ফিরে ঈদের নাটক, ইত্যাদি কিংবা আনন্দমেলা দেখাও বাদ যেত না।
এভাবেই তারুণ্যময় ছাত্র ও কর্ম জীবনের সময়গুলো যেন তীরবেগে ছুটছে। ছুটতে ছুটতে ওই তারুণ্য এখন বার্ধক্যের পথে। কোথায় তার গন্তব্য? অথচ আমার মা চেয়ে থাকতেন পথপানে। জাবির কখন বাড়ি আসবে। সব সন্তানই হাতের নাগালে। শুধু নেই আমার মা। মা চলে গেছেন পরপারে আজ দু’বছর হয়ে গেল। মায়ের আদর ও মমতার পরশে অন্যদের চেয়ে ছিল ব্যতিক্রম ও আলাদা। সে তো এখন আর নেই। দিন যত গড়িয়ে যেতে থাকল। দেশ, সমাজ ও সময়ের ঘূর্ণনে আগের মতো ঘরে ফেরার সময়ও ফুরিয়ে গেল! বাড়ির ওই সব খোলামেলা কোলাহল মাকে টানত। বাবাও ছিলেন অনেকটা এ-রকমই। মাঝে মাঝে অবাক বিস্ময়ে আমার মায়ের স্বর্ণাভ মুখাবয়ব যেন দেখা যায়। স্বপ্নের অবুঝ রাজ্যে কখনো ওঁদের আলোকছটা ভেসে আসে যেন। আবার মুহূর্তেই লীন হয়ে যায় সেই ছটা অনন্তে। ধরা যায় না। এক ভীষণ অতৃপ্তির স্বাদ পাওয়া ছাড়া আর কিছুই দেয় না এ বিভ্রম। আমি অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াই তাঁদের প্রিয়মুখ।
ঈদ আসে ঈদ যায়। সময়ের ঘূর্ণিপাকে প্রকৃতি ও পৃথিবীর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। তামাম দুনিয়ার রাষ্ট্রপুঞ্জের উৎকট উগ্রতায় মানব নিধনের উন্মাদনা। আরব বিশ্বের শোষক শ্রেণি, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের ধ্বংসলীলা, নিজের দেশে বধ্যভূমিতে শোকবিহ্বল ফিলিস্তিনিদের আর্তনাদ, রোহিঙ্গার অসহায় মানুষের করুণ আহাজারি। সবকিছুর মাঝেই ঈদ আসে, ঈদ যায়। উচ্ছল আনন্দে কাউকে হাসায়, কাউকে কাঁদায়।
আর যারা দূর প্রবাসে তাদের মাঝেও আনন্দ আসে, কখনো অঝোরধারায়। আর অদৃষ্টের ভাগ্যহারা বেদনার ঘানি টেনে যারা ব্যাকুল উদাসে ঘুরে বেড়ায়, দের মাঝেও ফিরে আসে স্বস্তি। এভাবে চরাচরজুড়ে ফিরে আসুক শান্তি সর্বত্র। ঈদের আনন্দ সবার মাঝে তৃপ্তি, সুখ ও মধুরতর হয়ে উঠুক।অনুপম সৌন্দর্যে ঐশ্বর্যম-িত হয়ে উঠুক সবার জীবন। নেমে আসুক আনন্দধারা। সমাজ ও দেশের প্রতিটি মানুষের বিবেক এবং নীতি জাগ্রত হোক মানুষের কল্যাণে, ধর্মীয় ও সামাজিক কাজে, কর্মে, চিন্তা চেতনায় অনন্য। তাহলেই, আমাদের, রমজানের রোজা, সাহরি,ইফতারি, তারাবি,ঈদ সহ অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগী মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে গ্রহণীয় ও বরণীয় হবে, ইনশাআল্লাহ।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

সিলেটে যে কারনে ‘চায়না-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল’ স্থাপনে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি

সুন্দরগঞ্জে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদে মানববন্ধন

এবার ‘বাস মিস’ নয়, নতুন সম্ভাবনায় জোর বাংলাদেশ-পাকিস্তানের

গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির হঠকারী সিদ্ধান্তে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে : জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ

মতলবে ২ পরীক্ষার্থী বহিস্কার

ওয়াকফ আইন কার্যকর পিছিয়ে দিলো ভারত সরকার

রাজশাহীতে বিশেষ অভিযানে দুইজনসহ আটক ১৭

তুচ্ছ ঘটনায় ছোট ভাইয়ের নির্মম আঘাতে বড় ভাইয়ের মৃত্যু !

একাত্তরে গণহত্যার জন্য পাকিস্তানকে ক্ষমা চাইতে বলল বাংলাদেশ

উইন্ডিজের কাছে হেরে অপেক্ষা বাড়ল বাংলাদেশের

বাগমারার বার শিক্ষককে অব্যাহতি ও পাঁচ শিক্ষার্থী বহিস্কার

সংস্কার কেন ভোটাধিকার আর গণতন্ত্রের বিকল্প হবে: প্রশ্ন রিজভীর

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের নিয়ে আপত্তিকর ব্যানার উদ্বেগ-নিন্দা সিইউজে'র

রাত পোহালেই কর্মী সম্মেলন: লাকসাম জুড়ে জামায়াতের নেতা-কর্মীদের মাঝে উৎসবের আমেজ

দেশের যেসব অঞ্চলে তীব্র ঝড়ের আভাস দিলো আবহাওয়া অধিদপ্তর

চারুকলায় এবং ভাস্কর মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ একইসূত্রে গাঁথা :ইউট্যাব

সিলেটে জিম্বাবুয়ে দলের অনুশীলনে বৃষ্টির বাগড়া, বাংলাদেশ দলও ঘাম ঝরালো মাঠে

মসজিদে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় আশুলিয়ায় সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন

২৭ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

র্যাবের মামলার আসামি পুলিশের শুভাকাঙ্খি হয়ে ধরা ছোঁয়ার বাইরে : ফজলু